বর্তমান সময়ে জন্ম সনদের মতোই মৃত্যু সনদের প্রয়োজনীয়তাও ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণের পর তার সম্পত্তির ভাগবন্টন, ওয়ারিশ সনদ তৈরি, পেনশন স্কিম প্রাপ্তি, বিধবা ভাতা প্রাপ্তি ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে মৃত্যু সনদের প্রয়োজন হয়।
এমতাবস্থায়, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার পরিবারের কোনো সদস্যের বা প্রতিবেশী/ নিকটস্থ কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে, আপনি নিজে তথ্য প্রদানকারী হিসেবে আবেদন করে সেই ব্যক্তির মৃত্যু সনদের জন্য আবেদন করতে পারেন।
এক্ষেত্রে অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করার নিয়ম, মৃত্যু সনদ কিভাবে পাবেন, কি কি লাগে, কত টাকা ও কত দিন সময় লাগবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ন আর্টিকেলটি পড়ে নিন।
ডিজিটাল মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন অনলাইন | Death Certificate Online
অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করতে, সর্বপ্রথম https://bdris.gov.bd/dr/application এই লিংকে ক্লিক করুন। তারপর মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে Bdris সার্ভারে অনুসন্ধান করে তথ্য নির্বাচন করুন। এবার নিবন্ধন কার্যালয়ের তথ্য ও মৃত্যু স্থানের তথ্য দিন। সর্বশেষে, আবেদনকারীর তথ্য দিয়ে ডকুমেন্টস আপলোড করে OTP ভেরিফাই করে আবেদন সাবমিট করুন।
এভাবে আবেদন সাবমিট করে দেওয়ার পর সেই আবেদন পত্রের কপি অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিবেন। পাশাপাশি প্রয়োজনের কাগজপত্র ও নিবন্ধন ফি জমা দিয়ে আসবেন। এভাবে ২-৩ কার্য দিবসের মধ্যেই আপনার সনদটি হাতে পেতে পারেন।
অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য আবেদন আবেদন ফরম পূরণ
নতুন মৃত্যু সনদের জন্য আবেদন করতে,
- প্রথমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সরকারি ওয়েবসাইটের https://bdris.gov.bd/dr/application এই লিংকে যাবেন।
- এবার, মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ লিখে, ক্যাপচা পূরণ করে “অনুসন্ধান” করবেন।
- তারপর মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন নির্বাচন করে পরবর্তী পেইজে নিবন্ধন কার্যালয়ের ঠিকানা দিবেন।
- তারপর মৃত ব্যক্তির বিবরণ ও স্বামী স্ত্রীর তথ্য দিবেন।
- নতুন পেজে মৃত্যু স্থানের বিবরণ ও মৃত্যুর সময় বসবাসের ঠিকানা তথ্য পূরণ করবেন।
- তারপর আবেদনকারীর তথ্য দিয়ে, মৃত ব্যক্তির মৃত্যুবরণের প্রমাণপত্র সংযোজন করবেন।
- সর্বশেষে, আবেদনকারীর মোবাইল নাম্বার দিয়ে OTP কোড ভেরিফাই করে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন সাবমিট করে দিবেন।
উপরোক্ত ভাবে অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন ফরম পূরণ করে একটি নতুন মৃত্যু সনদ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আবেদনের স্বপক্ষেও উপযুক্ত প্রমাণপত্র আপলোড করতে হবে। অন্যথায়, আবেদনটি বাতিল হতে পারে।
যাইহোক, আপনাদের সুবিধার জন্য মৃত্যু সনদের জন্য অনলাইনে আবেদন কিভাবে করতে হয়, সেই পদ্ধতির সবগুলো ধাপ বিস্তারিতভাবে ছবিসহ নিচে তুলে ধরা হলো:
ধাপ ১: মৃত্যু নিবন্ধন করার ওয়েবসাইটে যান
অনলাইনে নতুন মৃত্যু সনদের জন্য নিবন্ধন করার সরকারি ওয়েবসাইট হলো ‘রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয়’ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত Bdris ওয়েবসাইট। আপনি Bdris ওয়েবসাইটের হোমপেজে গিয়ে “মৃত্যু নিবন্ধন” ক্যাটাগরি থেকে “নতুন মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন” নামক সাব ক্যাটাগরীতে ক্লিক করলেই আবেদন পেজে যেতে পারবেন।
অথবা, আপনি চাইলে সরাসরি মৃত্যু নিবন্ধন অনলাইন আবেদন পেজে প্রবেশ করতে, https://bdris.gov.bd/dr/application -এই লিংকে ক্লিক করুন। তাহলেই আপনার সামনে আবেদন ফরমটি চলে আসবে।
ধাপ ২: মৃত ব্যক্তির তথ্য অনুসন্ধান
কোন বাংলাদেশী নাগরিকের মৃত্যু নিবন্ধন করার জন্য, সে ব্যক্তির আগে থেকেই অনলাইন জন্ম সনদ থাকতে হবে। সেই জন্ম নিবন্ধনের তথ্য Bdris সার্ভার থেকে অনুসন্ধান করেই উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু সনদ করা যাবে।
মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে এই পেইজের ১ম ঘরে মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন নম্বর লিখবেন। ২য় ঘরে মৃত ব্যক্তির জন্ম তারিখ “দিন/মাস/বছর” -এই ফরম্যাটে লিখবেন। তারপর একটি ক্যাপচা ইমেজ দেখতে পাবেন।
ক্যাপচার ছবিতে থাকা সংখ্যা ও অক্ষর গুলো নিচের ঘরে লিখে “অনুসন্ধান” লেখা অপশনে ক্লিক করবেন।
তথ্য অনুসন্ধান করার পর, আপনার দেওয়া জন্ম তারিখ ও জন্ম নিবন্ধন নম্বরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেখানো হবে। সেখানে উক্ত ব্যক্তির জন্ম তারিখ, ব্যক্তির নাম ও পিতা মাতার নাম দেখতে পাবেন।
আপনি সেই তথ্যগুলোর সর্বশেষে থাকা ডান দিকের “নির্বাচন করুন” অপশনটিতে ক্লিক করবেন।
ধাপ ৩: মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের ঠিকানা দিন
আপনি যেই কার্যালয়ে থেকে মৃত্যু সনদের জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন, এই ধাপে সেই কার্যালয়ের ঠিকানার তথ্য পূরণ করতে হবে। মূলত এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়/ সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা কার্যালয়ের ঠিকানার তথ্য দিতে হবে।
এখানে ধারাবাহিকভাবে নিবন্ধন কার্যালয়ের দেশ, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা/ ইউনিয়ন ও নিবন্ধন অফিসের নাম সিলেক্ট করতে হবে। আপনি যে কার্যালয় থেকে সনদ সংগ্রহ করতে চাচ্ছেন, এখানে সেই কার্যালয়ের ঠিকানাই পূরণ করবেন।
সকল তথ্য পূরণ করার পর, নিচের ডান পাশের “পরবর্তী” লেখা অপশনে ক্লিক করে দিবেন।
ধাপ ৪: মৃত ব্যক্তির ও স্বামী/ স্ত্রীর তথ্য দিন
এই পেজে, প্রথমে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর তারিখ লিখে দিবেন। আপনি চাইলে ডান পাশের ক্যালেন্ডার অপশনে ক্লিক করে তারিখটি সিলেক্ট করে দিতে পারেন। তারপর ডান পাশে মৃত্যুর কারণ হিসেবে যেকোন একটি কারণ সিলেক্ট করে দিতে হবে।
এবার নিচের দিকে মৃত ব্যক্তির স্বামী/স্ত্রীর তথ্যাবলী পূরণ করতে পারেন। এই অপশনটি বাধ্যতামূলক নয়। তবে আপনি চাইলে এসকল তথ্যগুলো পূরণ করে নিতে পারেন। কারণ পরবর্তীতে ওয়ারিশ সনদ তৈরিতে ও সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে এই তথ্যের প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে।
ধাপ ৫: মৃত্যু স্থানের বিবরণ ও বসবাসের ঠিকানা দিন
যে ব্যক্তির মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য আবেদন করছেন, তিনি যেখানে মৃত্যুবরণ করেছিলেন সেই ঠিকানার তথ্য সিলেক্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে মৃত্যু স্থানের দেশ, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ডাকঘর, গ্রাম ও বাসার ঠিকানা ধারাবাহিকভাবে সিলেক্ট করবেন।
নিচের দিকে মৃত্যুর সময় বসবাসের ঠিকানা, অর্থাৎ এই সময়কালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন তখন যেখানে বসবাস করতেন, সেই ঠিকানা সিলেক্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে মৃত্যু স্থানের ঠিকানা ও মৃত্যুর সময় বসবাসের ঠিকানা একই হলে ঠিক চিহ্নিত স্থানের খালি ঘরে ক্লিক করবেন।
ধাপ ৬: তথ্য প্রদানকারী/ আবেদনকারীর তথ্য পূরণ
এখানে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য প্রদানকারীর এবং মৃত্যু নিবন্ধন আবেদনকারীর তথ্য সিলেক্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে টিক চিহ্নিত খালি ঘরটিতে ক্লিক করবেন। তারপর আবেদনকারী ব্যক্তির সহীত সম্পর্ক সিলেক্ট করবেন।
তারপর নিচে আবেদনকারী ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও আবেদনকারীর নাম লিখে দিবেন।
ধাপ ৭: মৃত্যু নিবন্ধন অনলাইন আবেদন সাবমিট করুন
এবার মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য প্রমাণের জন্য বা মৃত্যুবরণের তথ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করতে হবে। এর জন্য টিক চিহ্নিত সংযোজন লেখাতে ক্লিক করে, ডকুমেন্ট সিলেক্ট করে আপলোড করে দিবেন।
তারপর নিচের ফোন নাম্বার লেখা অপশনে আবেদনকারীর একটি সচল মোবাইল নাম্বার লিখে, ওটিপি পাঠান লেখাতে ক্লিক করবেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার মোবাইলে একটি OTP (One Time Password) চলে আসবে। আপনি সেই করতে সর্বশেষ ঘরে লিখে, পাশে থাকা “সাবমিট” লেখা অপশনটিতে ক্লিক করে দিবেন।
ব্যাস, সেই মৃত ব্যক্তির জন্য মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন অনলাইনে সাবমিট করা হয়ে গেছে। এবার একটি কনফার্মেশন পেজে আপনার আবেদনটি সফলভাবে সাবমিট হওয়ার মেসেজ পাবেন।
মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন ফরম ডাউনলোড PDF
অনলাইনে আবেদন সাবমিট করার পর একটি আবেদনের আইডি (Application ID) পাবেন এবং আবেদন ফরম ডাউনলোড করারও অপশন পাবেন।
সেখান থেকে আপনার আবেদনের অনলাইন কপি বা মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন ফরম ডাউনলোড pdf করে রাখবেন। কারণ পরবর্তীতে এটি ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিতে হবে।
ইউনিয়ন পরিষদের মৃত্যু সনদ করতে যা যা লাগে
ইউনিয়ন পরিষদের মৃত্যু সনদ করতে আপনার যে সকল কাগজপত্র ও ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে, সেগুলো হলো:
- অনলাইন আবেদন পত্রের কপি।
- মৃত ব্যক্তির অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি।
- মৃত ব্যক্তির ঠিকানার তথ্য।
- মৃত্যুর তারিখ ও মৃত্যুর স্থানের প্রমাণপত্র।
- মৃত্যু তথ্য প্রদানকারীর জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও NID Number।
- আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও NID Number।
এছাড়াও মোবাইলে ওটিপি ভেরিফাই করার জন্য একটি সচল মোবাইল নাম্বার প্রয়োজন হবে।
মৃত্যু সনদ পেতে কতদিন লাগে?
অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার পর, সেই আবেদন পত্রের কপি ডাউনলোড করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার সময় আবেদন ফরমের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো একত্রিত করে জমা দিতে হবে।
তারপর মৃত্যু নিবন্ধন ফি সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে বা অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদে মৃত্যু নিবন্ধন ফি পরিশোধ করে আবেদন সাবমিট করার পর, মৃত্যু সনদ পেতে ২-৩ দিন কিংবা সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
এক্ষেত্রে আপনি যেই ইউনিয়ন পরিষদের ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধনের আবেদন করেছেন, সেই ইউনিয়ন পরিষদ থেকেই সনদ সংগ্রহ করতে হবে।
শেষকথা
উপরোক্ত আলোচনা থাকে আপনারা মৃত্যু সনদ কিভাবে করবেন এবং অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলেন। এখন থেকে আপনি নিজেই অনলাইনে মৃত্যু সনদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
যেহেতু এই সনদের গুরুত্ব অনেক বেশি, তাই আপনার পরিবারের বা নিকটস্থ কেউ মৃত্যু বরণ করলে, শীঘ্রই সেই ব্যক্তির মৃত্যু সনদ করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
FAQ’s
মৃত্যু সনদ কিভাবে করবো?
কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে, সেই ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এবং মৃত্যুবরণের স্থান ও কারণ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সরকারি ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে। তারপর আবেদন পত্রের কপি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং নিবন্ধন ফি ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিয়ে মৃত্যু সনদ করতে পারবেন।
মৃত্যু নিবন্ধন করার ফি কত?
কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করলে নিবন্ধন ফি দিতে হবে না। ৪৫ দিনের বেশি হলে ২৫ টাকা এবং মৃত্যুর ৫ বছরের বেশি হলে ৫০ টাকা ফি দিতে হবে।
আমি Nidbdris.info ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন প্রফেশনাল কন্টেন্ট রাইটার। বাংলাদেশের নাগরিক সেবা ও ই-সেবা সম্পর্কে দীর্ঘদিনের লেখালেখির অভিজ্ঞতা থেকে, এই ওয়েবসাইটে NID Card, e-Passport, Visa, Birth Certificate সম্পর্কিত টিউটোরিয়াল, দিকনির্দেশনা, ও সরকারি নোটিশ প্রকাশ করে থাকি।