জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম ২০২৪

বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম ডিজিটাল করার পূর্বের সনদগুলো অনলাইন করা ছিলনা। আপনারও এমন সনদ থাকলে, জানুন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম।

পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভা কার্যালয়ের রেজিস্টার বইতে আমাদের তথ্যসমূহ হাতে লিখে সংরক্ষণ করা হতো। পরবর্তীতে, দেশের সকলের নিবন্ধন অনলাইনে আপলোড করার জন্য তথ্যগুলোকে প্রক্রিয়াকরণ করে অনলাইনে নেয়া হয়। তখন অনেকেরই তথ্য বাদ পড়েছে। তাছাড়া ২০০১ সালের আগের নিবন্ধন গুলো অনলাইনে লিপিবদ্ধ হয়নি। 

এমতাবস্থায়, আপনার জন্ম নিবন্ধন থাকা সত্ত্বেও তা অনলাইনে পাওয়া যায় না। বর্তমানে, প্রত্যেক ব্যক্তির ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন ও নিবন্ধনে সকল তথ্যসমূহ ইংরেজিতে থাকা বাধ্যতামূলক। তাই পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই লেখাতে।

পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম

পুরাতন জন্ম সনদ অনলাইন করতে, প্রথমে জন্ম নিবন্ধনটি অনলাইনে আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে। যদি সঠিকভাবে অনুসন্ধান করার পরও কোন তথ্য না আসে, তাহলে নতুনভাবে জন্ম সনদের জন্য আবেদন করতে হবে। অন্যদিকে, জন্ম নিবন্ধনের তথ্য অনলাইনে থাকলেও যদি ইংরেজিতে না থাকে। তাহলে সংশোধনের আবেদন করে ইংরেজি নাম ও ঠিকানা যুক্ত করতে হবে।

আরও পড়তে পারেনঃ জন্ম নিবন্ধন আবেদনে BDRIS এর নতুন নির্দেশনা সমূহ

জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার আবেদন

জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার জন্য, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ওয়েবসাইটের আবেদন পেজে (bdris.gov.bd/br/application -এই লিংকে) ভিজিট করুন। তারপর ধারাবাহিকভাবে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

  • আপনার নিবন্ধনের ঠিকানা নির্বাচন করুন।
  • নিবন্ধনকারী ব্যক্তির পরিচয়বাচক তথ্য দিন।
  • এবার জন্মস্থানের ঠিকানা, পিতা মাতার তথ্য, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন। 
  • তারপর আবেদনকারীর প্রত্যয়ন/ তথ্য দিন।
  • নিবন্ধনের স্বপক্ষে উপযুক্ত প্রমাণাদি সংযোজন করুন। 
  • সর্বশেষে আবেদনটি রিভিউ করে একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিয়ে OTP (One Time Verification) ভেরিফাই করুন।
  • সবকিছু ঠিক থাকলে আবেদন সাবমিট করুন। 

অনলাইনে আবেদনের সাবমিটের পর অ্যাপ্লিকেশন আইডি এবং আবেদনের কপি প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করে রাখুন। পরবর্তীতে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভায় সেই আবেদনের কপি দিয়ে ও জন্ম নিবন্ধন এর ফি পরিশোধ করতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনলাইন করা ডিজিটাল জন্ম সনদ সংগ্রহ করতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি জানুন এখানে: অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করুন নতুন নিয়মে

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন অনুসন্ধান

আপনার জন্ম সনদটির তথ্য অনলাইনে আছে কিনা, তা যাচাই করার জন্য, ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর লাগবে। bdris সার্ভারে আপলোড করা সকল নিবন্ধনের তথ্য ডিজিটালাইজড করে ১৭ সংখ্যার করা হয়েছে। যেসকল বাংলাদেশী নাগরিকের জন্ম নিবন্ধনের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৭ সংখ্যার, সেই নিবন্ধন গুলোর তথ্য পূর্বেই অনলাইনে সাবমিট করা আছে। 

তবে ১৬ সংখ্যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর সম্মিলিত নিদর্শন আপনার কাছে থাকলে, তার ১৭ সংখ্যার বানিয়ে অনলাইনে আছে কিনা যাচাই করতে পারবেন। এর জন্য, https://everify.bdris.gov.bd/ -এই লিংকে ভিজিট করুন। তারপর আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জন্ম তারিখ ও ক্যাপচা পূরণ করে সার্চ করুন। জন্ম নিবন্ধনের তথ্য অনলাইনে থাকলে বিস্তারিত তথ্যাবলী দেখতে পাবেন। অন্যথায়, No Record Found লেখা আসবে। 

জন্ম সনদ যাচাই করতে বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি জানুন এখানে: জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই | জন্ম সনদ ডাউনলোড পিডিএফ

জন্ম সনদ অনলাইন চেক

১৬ সংখ্যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৭ সংখ্যার করে অনলাইনে চেক করা যায়। এর জন্য রেজিস্ট্রেশন নম্বরটির শেষের ৫ ডিজিটের পূর্বে ০ (শূন্য) যুক্ত করে ১৭ ভিজিট নম্বর বানান। তারপর নিম্নোক্ত নিয়মে জন্ম নিবন্ধন চেক করুন:

  • প্রথমে, https://everify.bdris.gov.bd/ – এই লিংকে ভিজিট করুন।
  • এবার অনুসন্ধান পেজে প্রবেশ করলে, ১ম ঘরে আপনার ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর লিখুন। 
  • ২য় ঘরে, YYYY-MM-DD (বছর-মাস-দিন) -এই ফরম্যাটে আপনার সঠিক জন্ম তারিখ লিখুন।
  • ৩য় ঘরে ক্যাপচা বা গানিতিক সমস্যার উত্তর লিখুন। 
  • এবার Search বাটনে ক্লিক করুন।

আপনার সনদটি অনলাইনে থাকলে সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্য পেজ দেখতে পাবেন। 

জন্ম সনদের তথ্য অনলাইনে না থাকলে কি করতে হবে

আপনার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য অনলাইনে পাওয়া না গেলে, প্রথমেই এর কারণ নির্ধারণ করুন। অনুসন্ধান সার্ভারে দেওয়া আপনার জন্ম রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও জন্ম তারিখ সঠিক কিনা দেখুন। সকল তথ্য সঠিক থাকার পরও No Record Found লেখা আসলে, অবশ্যই আপনাকে নতুনভাবে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে হবে। 

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন: অনলাইনে জন্য নিবন্ধন তথ্য না পাওয়ার কারন

জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে কি কি লাগে

পুরাতন জন্ম সনদ অনলাইন করতে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার মতোই একইরকম কাগজপত্র প্রয়োজন। নিচে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা দেওয়া হলো:

জন্ম নিবন্ধনকারীর বয়স ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর হলে যা যা লাগে

  • EPI টিকা কার্ড/ সীলসহ হাসপাতালের রেজিস্টার্ড স্বাস্থ্য কর্মীর সত্যায়িত প্রত্যায়নপত্র।
  • যেই সালে জন্ম সনদ অনলাইন করার আবেদন করছেন সেই বছরের কর পরিশোধিত হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ।
  • নিবন্ধনকারীর পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের কপি। (বর্তমানে আবারো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে)
  • আবেদনকারীর পিতা-মাতার NID কার্ডের ফটোকপি। (ঐচ্ছিক)
  • আবেদনকারী বিদ্যালয়ে ভর্তি হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে);
  • একজন অভিভাবকের সচল মোবাইল নম্বর।

জন্ম নিবন্ধনকারীর বয়স ৫ বছরের বেশি হলে যা যা লাগে 

  • আবেদনকারীর বয়স প্রমাণ করার জন্য রেজিস্টার্ড সরকারি এমবিবিএস বা তদূর্ধ্ব ডিগ্রিধারী ডাক্তারের দ্বারা সত্যায়িত প্রত্যয়ন পত্র।
  • JSC/ SSC/ সমমান পরীক্ষার সার্টিফিকেট। (যদি থাকে)
  • নিবন্ধনকারীর পিতা-মাতার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের কপি। (বর্তমানে আবারো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে)
  • আবেদনকারীর শিশুর পিতা-মাতার NID কার্ডের ফটোকপি (যদি থাকে);
  • জন্মস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য হালনাগাদ কর পরিশোধের রশিদ।
  • একজন অভিভাবকের সচল মোবাইল নম্বর।

উপরোক্ত কাগজপত্র গুলো থেকে আবেদনের সময় যেকোনো একটি বা দুইটি উপযুক্ত প্রমাণপত্র সংযুক্ত করলেই হবে।

হাতে লেখা জন্ম সনদ অনলাইন করার নিয়ম

২০০১ সালের আগের জন্ম নিবন্ধন গুলো হাতে লিখে সংরক্ষণ করা হতো। হাতে লেখা জন্ম সনদ অনলাইন করতে, আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বরটি ১৭ ডিজিট বানিয়ে bdris.gov.bd চেক করুন। নিবন্ধনের তথ্য অনলাইনে পাওয়া না গেলে, BDRIS ওয়েবসাইট থেকে নতুনভাবে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করুন।

নিবন্ধনের তথ্য যদি অনলাইনে থাকে, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র ইংরেজি নাম ও ঠিকানা যুক্ত করে সংশোধনের আবেদন করলেই চলবে। যদি আগে থেকেই আপনার তথ্যসমূহ বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতে থাকে, তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রিন্ট করে নিলেই হবে।

জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করতে কত টাকা লাগে

সাধারণত জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন করতে নতুনভাবে আবেদন করতে হয়। তাই নতুন জন্ম নিবন্ধন ফি এবং জন্ম নিবন্ধনটি অনলাইন করার ফি একই। যেহেতু বর্তমানে নতুন জন্মগ্রহণকারী শিশুর জন্ম সনদ পূর্বে অনলাইন করা ছিল না। সেক্ষেত্রে ৪৫ দিনের বেশি বয়সীদের জন্ম সনদই অনলাইন করতে হয়। সেক্ষেত্রে:

  • ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর বয়সীদের নিবন্ধন অনলাইন করতে ২৫ টাকা লাগে।
  • ৫ বছরের বেশি বয়সীদের নিবন্ধন অনলাইন করতে ৫০ টাকা লাগে।

একইভাবে বিদেশে থাকা বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে আবেদন করলে $১ বা‌ ১ মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন অনলাইন ইংরেজি করার নিয়ম

রেজিস্টার জেনারেটর কার্যালয়ের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী, বর্তমানে যে সকল জন্ম নিবন্ধন করা হয় তা একইসাথে বাংলা ও ইংরেজিতে পাওয়া যায়। তবে পুরাতন নিবন্ধন গুলো অনলাইনে থাকলেও শুধুমাত্র বাংলাতেই থাকে। সেক্ষেত্রে সকল সরকারি সেবা পেতে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি তথ্যও অনলাইনে সাবমিট করতে হয়।

প্রথমে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার পর, আপনার জন্ম নিবন্ধনটি ইংরেজি করা না হলে শুধু বাংলা তথ্য থাকবে। বাংলা তথ্য থেকে থাকলে ইংরেজি করার জন্য জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে অনলাইনে সংশোধনের আবেদন করতে পারেন। অথবা, সরাসরি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/ পৌরসভা কার্যালয়/ সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলরের অফিসে উপস্থিত হয়ে আবেদন করতে পারেন। 

নিবন্ধন ইংরেজি করতে প্রয়োজন হবে:

  • জন্ম সনদের ফটোকপি,
  • ইংরেজি তথ্যের জন্য নিবন্ধনকারীর বিদ্যালয়ের প্রত্যয়ন পত্র,
  • পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ড,
  • এবং হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ।

জন্ম সনদের তথ্য সংশোধন করতে চাইলে পড়ুন: জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করুন | Birth Certificate Correction

জন্ম সনদ ডিজিটাল করার নিয়ম

পুরাতন জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল বা অনলাইন করতে চাইলে উপরোক্ত নিয়মে, নতুনভাবে জন্ম সনদের জন্য আবেদন করতে হবে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে আবেদন করার পর, ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই আপনার অনলাইন বা ডিজিটাল জন্ম সনদ সংগ্রহ করতে পারবেন।

শেষকথা

উপরোক্ত পদ্ধতিতে পুরাতন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়মে হাতে লেখা জন্ম সনদ অনলাইন করতে পারবেন। জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যায় যাবতীয় বিষয়বস্তু জানতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট। তাৎক্ষণিক সাপোর্ট পেতে/ তথ্য সহায়তা পেতে ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- NIDBDRIS.info, ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *