ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম ২০২৪

২০২৪ সালে আপনার ভোটার এলাকা স্থানান্তর করতে চাচ্ছেন? তাহলে জেনে নিন ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম এবং কিভাবে আবেদন ফরম ফরম করবেন।

ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক ঠিকানা স্থানান্তরের কারণে বাসস্থানের এলাকা পরিবর্তিত হয়। কিন্তু আমরা সেই এলাকার ভোটার না হলে, ভোট দেওয়ার নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হই। অথচ, নিজে নিজে উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করলেই আপনি যেই নতুন ঠিকানায় বসবাস করবেন, সেই ঠিকানার ভোটার হতে পারবেন।

তাই ভোটার স্থানান্তর করতে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম এবং যেভাবে আবেদন ফরম পূরণ করবেন তার বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি জেনে নিন এখানে।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য, উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ‘ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম ১৩’ পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ জমা দিন। তারপর বিকাশের মাধ্যমে আইডি কার্ডের সংশোধন ফি পরিশোধ দিন। কাগজপত্র ঠিক থাকলে ৭-১৫ কার্য দিবসের মধ্যেই আপনার ভোটার এলাকা স্থানান্তর হয়ে যাবে।

এই এলাকা স্থানান্তর হলেই আপনি নতুন ঠিকানায় ভর্তিতে পারবেন। তবে নতুন ঠিকানার আইডি কার্ড টি ডাউনলোড করতে পারবেন না।

নতুন ভোটার ঠিকানার তথ্যসহ ভোটার আইডি কার্ড পেতে অনলাইনে ২৩০ টাকা ফি পরিশোধ করে রি-ইস্যুর জন্য আবেদন করবেন। রিইস্যু সম্পন্ন হলে NIDW ওয়েবসাইট থেকে আপনার ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা সংশোধিত আইডি কার্ডটি ডাউনলোড করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ডের ছবি পরিবর্তন করুন নিজেই

ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম ১৩ PDF Download

বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে হয়। তখন বর্তমান ঠিকানা থেকে স্থায়ী ঠিকানা কিংবা স্থায়ী ঠিকানা থেকে বর্তমান ঠিকানায় ভোটার স্থানান্তর করে থাকি।

অনেক সময় এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা এমন কি অন্য জেলাতেও ভোটার স্থানান্তর করতে হতে পারে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোটার স্থানান্তর করার জন্য যেভাবে ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম ১৩ পূরণ করে আবেদন করতে হবে।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম ১৩ – এখানে ক্লিক করে PDF কপিটি ডাউনলোড করে নিন।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম

ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম ১৩ পূরণ করার নিয়ম

আপনার ভোটার এলাকা স্থানান্তর করার জন্য NID Form 13 কিভাবে পূরণ করবেন, তার বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি নিচে ধাপে ধাপে দেখানো হলো: 

ধাপ ১: আবেদনকারীর তথ্য প্রদান

ফরমের প্রথমাংশে বাংলায় আবেদনকারীর সম্পূর্ণ নাম, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার ও আবেদনকারীর সঠিক জন্ম তারিখ লিখুন।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন

আরও পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করুন| NID Correction.

ধাপ ২: বর্তমান ভোটার এলাকার তথ্য প্রদান

এবার আবেদনকারীর বর্তমান ভোটার এলাকার ঠিকানা দিতে হবে। এক্ষেত্রে বর্তমান ভোটার এলাকার নাম, বাসার হোল্ডিং নাম্বার, গ্রামের নাম, ভোটার এলাকার নাম্বার, উপজেলার নাম, জেলার নাম ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।

ভোটার এলাকা স্থানান্তর

ধাপ ৩: পরিবর্তিত ঠিকানার তথ্য প্রদান

এই অংশে, আপনি বর্তমান ভোটার এলাকা থেকে স্থানান্তর করে নতুন যে এলাকায় ভোটার হতে চাচ্ছেন সেই এলাকার ঠিকানা লিখবেন। এখানে পরিবর্তিত ভোটার এলাকার জেলার নাম, উপজেলার নাম, ইউনিয়ন/ সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা, ভোটার এলাকার নাম, ভোটার এলাকার নম্বর, ওয়ার্ড নম্বর, একটি মোবাইল নম্বর, ডাকঘর ও পোস্ট কোড লিখতে হবে। তথ্য পূরণের পূর্বে অবশ্যই সঠিক তথ্য জেনে নিবেন।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার আবেদন

নিচের ৬ নং অংশে, আপনি নতুন ভোটার এলাকায় কতদিন যাবত অবস্থান করেছেন তা লিখবেন।

ধাপ ৪: ভোটার এলাকা পরিবর্তনের কারণ

ফরমের ৭ নং অংশে, আপনি কি কারনে ভোটার এলাকা স্থানান্তর করতে চাচ্ছেন, সেটি উল্লেখ করতে হবে। যেমন: চাকরি, বৈবাহিক কারণে কিংবা পরিবর্তিত ঠিকানাই আপনার স্থায়ী ঠিকানা হলে ইত্যাদি।

ভোটার মাইগ্রেশন - voter migration

ধাপ ৫: আবেদনকারী ও তথ্য শনাক্তকারীর স্বাক্ষর

২য় পৃষ্ঠায় ৮ নং অংশের নিচে আবেদনকারীর স্বাক্ষর বা টিপসই দিন। সাক্ষরটি ভোটার আইডি কার্ডের অনুরূপ হওয়া উচিত। তারপর নিচে একজন জনপ্রতিনিধিকে এই মর্মে স্বাক্ষর দিতে হবে যে, তিনি আবেদনকারীকে সনাক্ত করেছেন। তথ্য সনাক্তকারীকে স্বাক্ষরের সাথে নিজের এনআইডি নাম্বার ও সিল ব্যবহার করতে হবে।

voter elaka poriborton korar niyom

ব্যাস, এভাবেই ভোটার এলাকায় স্থানান্তর করার ফরম-১৩ পূরণ করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম ২০২৪

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করার নিয়ম

আপনার ভোটার এলাকায় স্থানান্তর করার জন্য ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন ফরম পূরণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো সংগ্রহ করে আপনার স্থানীয় উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিন। তারপর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে আপনার ডকুমেন্টস গুলো ও আবেদনের তথ্যসমূহ যাচাই করা হবে। এ সময়েই আপনাকে NID সংশোধন ফি অনলাইনে দিতে হবে।

তারপর আপনার তথ্যগুলো উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে নির্বাচন হাইকমিশনে পাঠানো হবে। তখন বর্তমান ভোটার এলাকা থেকে আপনার তথ্য স্থানান্তর করে নতুন এলাকার ডাটাবেজে সাবমিশন সম্পন্ন করা হবে।

ভোটার এলাকা স্থানান্তর করতে কি কি লাগে

ভোটার এলাকা স্থানান্তর করতে,

  • আপনার ভোটার আইডি কার্ডের কপি।
  • সঠিকভাবে পুরনকৃত ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম- ১৩।
  • আপনি বর্তমানে যে এলাকার ভোটার আছেন, সেই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ/ চেয়ারম্যান এর কার্যালয় থেকে একটি ভোটার স্থানান্তর প্রত্যয়ন পত্র।
  • ভোটার এলাকা স্থানান্তরের জন্য যে এলাকায় স্থানান্তর হবেন তার আওতাধীন চেয়ারম্যান কর্তৃক স্বাক্ষরিত নাগরিকত্ব সনদ।
  • ইউটিলিটি বিলের কপি। যেমন: বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি।
  • NID Form 13 এর ২য় পৃষ্ঠায় শনাক্তকারী হিসেবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যানের নাম, NID নম্বর, স্বাক্ষর ও সিল থাকতে হবে।

এছাড়াও আপনার উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে অন্য কোন ডকুমেন্টস চেয়ে থাকলে সেগুলো প্রয়োজন হবে।

আরও পড়ুনঃ নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে ২০২৪।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফি কত

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য সর্বমোট ২৩০ টাকা ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ২০০ টাকা হলো এনআইডি কার্ডের সংশোধন ফি এবং ১৫% ভ্যাট হিসেবে বাকি ৩০ টাকা প্রযোজ্য হয়।

অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুবিধার্থে বর্তমানে বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিং পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ভোটার এলাকা স্থানান্তর জমা দেওয়া যাবে।

বিকাশের মাধ্যমে ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফি জমা দেওয়ার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

  • প্রথমে বিকাশ অ্যাপে লগইন করে ড্যাশবোর্ড থেকে Pay Bill অপশনে যান।
  • এবার পে বিল অপশন থেকে ‘NID Service (সরকারি ফি)’ অপশনটি সিলেক্ট করুন।
  • তারপর নতুন পেজ ওপেন হলে, এনআইডি সার্ভিসের আবেদনের ধরনে – NID Info Correction সিলেক্ট করুন।
  • একইসাথে নিচে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বারটি লিখে পরবর্তী পেইজে যান।
  • এখানে ভোটার এলাকা স্থানান্তর ফি ২৩০ টাকা দেখানো হবে। নিচে ট্যাপ করে পরবর্তী পেইজে যান।

সর্বশেষে, আপনার বিকাশ একাউন্টের PIN কোডটি লিখে বিকাশ অ্যাপে ট্যাপ করে ধরে রেখে পে বিল সম্পন্ন করবেন।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কতদিন সময় লাগে

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে সচরাচর ১ থেকে ২ সপ্তাহ বা ৭-১৫ কার্যদিবস সময় লাগতে পারে। আপনি যদি ভোটার স্থানান্তর করার জন্য সঠিকভাবে আপনার আবেদন ফরমটি পূরণ করে উপযুক্ত কাগজপত্র সহ উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দেন, তাহলে খুব শীঘ্রই আপনার ভোটার এলাকা স্থানান্ত হয়ে যাবে।

তবে নির্বাচন অফিসে কোন জটিলতা কিংবা আপনার ডকুমেন্টসে কোন ত্রুটি থাকলে সময় বেশি লাগতে পারে। তবে সব মিলিয়ে বড়জোর ৪ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এ বিষয়ে আপডেট জানতে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার ১ সপ্তাহ পর উপজেলা নির্বাচন অফিসে উপস্থিত হয়ে আপনার আবেদনটি এপ্রুভ হয়েছে কিনা জেনে নিতে পারেন। 

নতুন ঠিকানায় আইডি কার্ড পাবেন কিভাবে

ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য আবেদন করার পর, আপনার আবেদনটি এপ্রুভ হলে ৭-১৫ অনেক দিন পর, NIDW ওয়েবসাইটে এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে লগইন করে যাচাই করতে পারবেন। তবে নতুন এলাকায় ভোটার হওয়ার সুযোগ পেলেও আপনাকে সংশোধিত NID কার্ড প্রদান করা হবে না।

তার জন্য, NIDW ওয়েবসাইটে লগইন করার পর ড্যাশবোর্ডে রিইস্যু অপশন দেখতে পারবেন। এই রিইস্যু অপশনে প্রবেশ করে ফি পরিশোধ করতে হবে। বিকাশের মাধ্যমে পুনরায় রিইস্যু ফি পরিশোধ করে রিইস্যুর আবেদন সম্পন্ন করবেন।

তারপর নির্বাচন কমিশনের অনলাইন ডাটাবেজে আপডেট তথ্য সংযোজন করা হলে আপনার নতুন ঠিকানায় আইডি কার্ড পাবেন। এবার এটি ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে ব্যবহার করুন।

আরও পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড ২০২৪

অনলাইনে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম

অনলাইনে শুধুমাত্র ভোটার আইডি কার্ডের বর্তমান ঠিকানার বিভিন্ন তথ্য সংশোধন করা যায়। তবে স্থায়ী ঠিকানার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাড়ির হোল্ডিং নম্বর, পোস্ট অফিস ও পোস্ট কোড পরিবর্তন করা যায়। অনলাইনে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা যায় না। 

তাই উপরোক্ত পদ্ধতিতে আপনার বর্তমান ভোটার এলাকার উপজেলা নির্বাচন অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরমটি জমা দিয়ে সরাসরি আবেদন করুন।

শেষকথা 

উপরোক্ত ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়মে আপনি নতুন এলাকায় ভোটার হতে পারবেন। তবে কোনো কারণে আপনার আবেদনটি গ্রহণ করা না হলে, সরাসরি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে কারণটি জানুন এবং তা সংশোধনের চেষ্টা করুন।

2 thoughts on “ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম ২০২৪”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *