বর্তমানে বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ‘জন্ম সনদে জন্ম তারিখ পরিবর্তন নির্দেশনা ২০২৩’ – সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে নিন এখানে।
বাংলাদেশের রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় থেকে জন্ম নিবন্ধন এর বয়স বা জন্মতারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে কঠিন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এখন থেকে পাবলিক পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন, বোর্ড পরীক্ষার সার্টিফিকেট, NID Card কিংবা Passport অনুসারে জন্ম তারিখ পরিবর্তন করা যাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশের বেশ কিছু জনগণ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য জন্ম নিবন্ধনের বয়স বা জন্মতারিখ পরিবর্তন করেছে ব্যাপকভাবে। অনেকেই জন্ম নিবন্ধন এর বয়স বাড়িয়ে ভোটার আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি করে। এতে করে সারাদেশব্যাপী বহু দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতি বৃদ্ধি পায়।
মূলত এসকল নেতিবাচক কার্যক্রম বন্ধ করার লক্ষ্যেই জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয় থেকে, জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধনের আবেদন গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।
জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধন সম্পর্কে রেজিস্টার জেনারেলের প্রজ্ঞাপন
গত ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে বাংলাদেশের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সম্পর্কিত রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় থেকে জন্ম নিবন্ধনের বয়স সংশোধন সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। রেজিস্টার জেনারেলের প্রজ্ঞাপন নমুনা তথ্য দেওয়া হলো:
“জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ (সংশোধিত ২০১৩) অনুসরণে, দেশে/ বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করা হয়। এ আইনের অধীন প্রণীত বিধিতে শিশুর জন্মের পরপরই এবং ব্যক্তির মৃত্যুর পরপরই মৃত্যুর খবর স্থানীয় রেজিস্ট্রারকে (ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়কে) দেয়া ও নিবন্ধন করানোর নির্দেশনা রয়েছে। এক্ষেত্রে শিশুর জনসনদে লিখিত তারিখই হবে তার প্রথম ও আদি জন্ম তারিখ। পরবর্তীতে এই জন্ম তারিখের ভিত্তিতেই বিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম, এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট তৈরি হয়ে থাকে।
তবে সমসাময়িক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনেকেই অনেকেই পাবলিক পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন, NID Card বা Passport তৈরি করার সময় জন সনদে দেওয়া জন্ম তারিখ থেকে ভিন্ন একটি তারিখ দিয়ে থাকে। এভাবে নতুন একটি জন্ম তারিখ দিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন, পাবলিক পরীক্ষার সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তৈরি করে, পরবর্তীতে সেই নতুন ডকুমেন্টের তথ্যানুসারে জন্ম নিবন্ধনের জন্ম তারিখ সংশোধন করতে চায়।
স্বাভাবিকভাবেই দেশের নিবন্ধক অফিসগুলো (ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়কে) এ সকল আবেদন গ্রহণ করে এবং অনুমোদনের জন্য নিম্নস্বাক্ষরকারীর নিকট প্রেরণ করে। ইহা সমীচীন নয়। কোন নিবন্ধন অফিস যেন জন্ম সনদের প্রাথমিক জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে পাবলিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট, NID Card, পাসপোর্ট তৈরি করে জন্ম তারিখ বা জন্ম সাল পরিবর্তনের আবেদন গ্রহণ করা না করে। এবং সেই আবেদন জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের সার্ভারে আপলোড না করে এবং অনুমোদনের জন্য যেন প্রেরণ না করে, তার অনুরোধ করা হলো। এ ধরনের আবেদন মোটেও অনুমোদনযোগ্য নয়। এটি তার অধিক্ষেত্রের সকল নিবন্ধক অফিসে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।”
উপরোক্ত প্রজ্ঞাপনটি একটি নমুনা তথ্য। মূলত এরকম নির্দেশনা দিয়েই প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সকল নিবন্ধক অফিসগুলোতে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জন্ম নিবন্ধনে বয়স সংশোধন করা কি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে?
জন্ম নিবন্ধনে বয়স সংশোধন বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ এমনটি বলা যায় না। কারণ কোন ব্যক্তি যদি প্রমাণ করতে পারে যে, জন্ম নিবন্ধন করার সময় সে সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করেছিল। কিন্তু নিবন্ধকের কার্যালয় থেকে সার্ভারে তথ্য সাবমিট করার সময় ভুল তথ্য আপলোড করা হয়েছিল, সেক্ষেত্রে জন্ম সনদের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করা সম্ভব।
তবে এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধনের বয়সের দিন ও মাসের সংখ্যা পরিবর্তন করা যাবে। কিন্তু জন্ম তারিখের বছরের সংখ্যা পরিবর্তন করা যাবে না। আর পাবলিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট, NID Card, পাসপোর্ট ইত্যাদি প্রমাণপত্র দেখিয়ে আবেদন করলে, সেই আবেদনটি বাতিল করে দেওয়া হবে।
নিবন্ধক কার্যালয়ের মূলনীতি হলো, যেহেতু জন্ম সনদের ভিত্তিতেই একজন বাংলাদেশী নাগরিকের পাসপোর্ট, এনআইডি কার্ড, বিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম ইত্যাদি হয়ে থাকে। সুতরাং, অন্যান্য ডকুমেন্টের তথ্য সঠিক দেখিয়ে জন্ম নিবন্ধন এর বয়স ভুল প্রমাণ করা অযৌক্তিক। আর এই কারণেই বয়স সংশোধন বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অন্যথায়, যেকোন ব্যক্তি চাইলেই তাদের সুবিধামতো নতুন জন্ম তারিখ দিয়ে এনআইডি কার্ড বা পাসপোর্ট তৈরি করে, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করিয়ে নিতে পারবে। এতে করে সাধারণ মানুষ জালিয়াতির শিকার হবে।
শেষকথা
আশাকরি, জন্ম নিবন্ধন বয়স সংশোধন কেন বন্ধ করা হয়েছে এবং এ সম্পর্কিত নির্দেশনা সম্পর্কে সঠিক ধারণা পেয়েছেন। সর্বোপরি, আমাদেরকে স্বচ্ছতার সাথে এসকল ডকুমেন্ট তৈরি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা করতে হবে। আর ভুল তথ্য দিয়ে এনআইডি কার্ড কিংবা পাসপোর্ট তৈরি করার আগে সতর্ক থাকতে হবে।
আমি Nidbdris.info ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন প্রফেশনাল কন্টেন্ট রাইটার। বাংলাদেশের নাগরিক সেবা ও ই-সেবা সম্পর্কে দীর্ঘদিনের লেখালেখির অভিজ্ঞতা থেকে, এই ওয়েবসাইটে NID Card, e-Passport, Visa, Birth Certificate সম্পর্কিত টিউটোরিয়াল, দিকনির্দেশনা, ও সরকারি নোটিশ প্রকাশ করে থাকি।