NID BD বা NID Service Bangladesh হলো বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত আইডি কার্ড সম্পর্কিত সেবা সমূহ। দেশের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকরেই এই সেবার এর আওতায় আসতে হয়।
বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র সংক্রান্ত যাবতীয় সেবাসমূহ অনলাইন ভিত্তিক করা হয়েছে। তাই অনলাইনে নির্বাচন কমিশনের NID Server ব্যবহার করে আপনি কিভাবে নাগরিকত্বের সেবা সমূহ ভোগ করতে পারবেন, তা জানা অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাই NID BD, NID Service Bangladesh, Smart NID Card, NID Server ও NID Wing -এর সেবা সমূহ এখানে দেখে নিন।
NID Service Bangladesh | জাতীয় পরিচয় পত্রের সেবাসমূহ
NID Service Bangladesh -এর প্রধান সার্ভিস হলো ভোটার আইডি কার্ড নিবন্ধন। আপনি যদি একজন বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে থাকেন এবং আপনার ১৮ বছর বয়স হলে, আজই ভোটার হতে জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে আপনার ১৬ বছর বয়স হলেও ভোটার নিবন্ধন করতে পারবেন। কিন্তু ১৮ বছর হওয়ার আগে পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার পাবেন না।
বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র সংক্রান্ত সেবাসমূহ:
ক্যাটাগরি – NID Card |
NID Card Registration করার প্রক্রিয়া | NID BD
এনআইডি কার্ড ব্যবহার করেই বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন তাদের সঠিক নির্বাচনী কার্যক্রম সম্পন্ন করে। নতুন ভোটার নিবন্ধন (NID Application System) এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে:
- S S C বা সমমানের সার্টিফিকেট
- জন্ম শংসাপত্র।
- পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স/ TIN সার্টিফিকেট।
- ইউটিলিটি বিলের কপি বা হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ।
- প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব শংসাপত্র।
- বাবা, মা, স্বামী/স্ত্রীর NID কার্ডের ফটোকপি।
- এছাড়াও একটি ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণ করে জমা দিলেই, আপনার এন আইডি নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবেন।
আরো পড়ুন: নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে ২০২৪।
বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেবা সমূহ হলো:
ডুপ্লিকেট এনআইডি প্রদান
যদি কোন বাংলাদেশী নাগরিক তার জাতীয় পরিচয় পত্র হারিয়ে ফেলে, বা কোনভাবে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সে নতুন করে NID Wing সার্ভারে নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করতে পারবে। এটিকে মূলত ভোটার আইডি কার্ড রি-ইস্যু আবেদন বলা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে NID Service BD এর পরিচালনাকারী অধিদপ্তর/ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি নতুন জাতীয় পরীক্ষা করতে প্রদান করবে।
এনআইডি সংশোধন
জাতীয় পরিচয় পত্র সংক্রান্ত NID Service Bangladesh এর আরেকটি সার্ভিস হলো- এনআইডি সংশোধন। স্বাভাবিকভাবেই নতুন ভোটার নিবন্ধনের সময় আমাদের কিছু তথ্য ভুল লিপিবদ্ধ হতে পারে। সেই তথ্যগুলো পরবর্তীতে সংশোধন করার জন্য আবেদন করা যাবে।
তবে NID তথ্য সংশোধনের জন্য, আবেদনকারীকে অবশ্যই সহায়ক নথি সহ আবেদন করতে হবে। আবেদনকারী ব্যক্তির যদি এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট থাকে, তাহলে সংশোধনের জন্য এই সার্টিফিকেট অগ্রাধিকার পাবে। এছাড়াও জন্ম নিবন্ধন সনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, বিবাহ/ তালাক শংসাপত্র, সংবাদপত্রে প্রকাশিত সার্কুলেশন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হলফনামা, পরিষেবা বই ইত্যাদিও সঠিক তথ্য প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
ভোটার এলাকার স্থানান্তর
যেসকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকরা ইতিমধ্যেই NID BD -এর আওতায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে, তারা চাইলে তাদের ভোটার এলাকা মাইগ্রেট করতে পারবে। এর জন্য একটি মাইগ্রেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
ফরম পূরণ করে আবেদন করার পর, ফরম গুলো যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা/ থানা নির্বাচন অফিসে পাঠাতে হবে। এর সাথে ব্যক্তির আইডি কার্ডের ফটোকপিও দিতে হবে। তাহলেই নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটার এলাকায় স্থানান্তর করে দেওয়া হবে।
মৃত ভোটারের তথ্য মুছে ফেলা
আপনার পরিবারের কোন ভোটার ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে, সেই ভোটারের তথ্য মুছে ফেলার জন্যও আবেদন করতে পারবেন। অনেক সময় মৃত ব্যক্তির পরিচিতি ব্যবহার করে নানান বে-আইনি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এগুলো থেকে পরিত্রান পেতে ফর্ম-12 পূরণ করে আপনার সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে জানিয়ে আবেদন করতে পারবেন।
এনআইডি কার্ড বিতরণ (NID Card Delivery)
এনআইডি কার্ড বিতরণ করা হলো NID Service Bangladesh -এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা। এর আওতায় রয়েছে, যারা নতুন ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে, কিন্তু তাদের এনআইডি কার্ড এখনো হাতে পায়নি। তারা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে তাদের আইডি কার্ড সংগ্রহ করবেন।
Smart NID Card BD – স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র
২০১৬ সালে বাংলাদেশের NID Card এর তথ্য ভান্ডারে ও ভিজুয়াল এনআইডি কার্ডে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। মূলত তখনই এনআইডি কার্যক্রম অনলাইন ভিত্তিক করার জন্য NID Wing নামে একটি সার্ভার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সেই এনআইডি উইং সার্ভার টি ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র (Smart NID BD) উপস্থাপন করে।
সাধারণ এন আইডি কার্ডের তুলনায় Smart NID Card -এ কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। তাছাড়া এটি অধিক নিরাপদ। স্মার্ট কার্ডে একটি ইন্টারগ্রেট সার্কিট কার্ড সংযুক্ত থাকে। এই ইন্টারগ্রেট সার্কিট কার্ডটি চিপ কার্ড নামেও পরিচিত। NID service Bangladesh -এর এই চিপ কার্ডে ব্যক্তির যাবতীয় তথ্যাবলী সংরক্ষণ করা যায়। এমনকি মেশিনের সাহায্যেও এই চিপ কার্ডটি রিড করা যায়।
আগে যে সাধারণ এন আইডি কার্ড সরবরাহ করা হতো, সেগুলো খুব সহজেই প্রিন্ট করে নকল বের করা যেত। কিন্তু বর্তমানে তা আর সম্ভব হবে না স্মার্ট কার্ড থাকার ফলে। পরে ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি নতুন ধাপ উন্মোচিত হয়েছে।
পাশাপাশি স্মার্ট কার্ডের ডিজাইনে বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ের প্রতীকগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, একটি স্মার্ট এনআইডি কার্ডের মধ্যেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পাখি, শাপলা ফুল, চা বাগান, স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি প্রতিক রয়েছে।
NID কার্ডের সুবিধা সমূহ | NID Service BD
বাংলাদেশের NID Card বা Smart NID Card হোল্ডাররা যে সকল সুযোগ-সুবিধা পাবে, সেগুলো হলো:
- নাগরিক অধিকার ও জাতীয় সুবিধা সমূহ।
- জাতীয়ভাবে একটি পরিচয়।
- ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারবেন।
- ব্যক্তিগত ব্যবহারের মটর যান রেজিস্ট্রেশন।
- পাসপোর্ট আবেদন করতে পারবেন।
- জমি ক্রয় ও বিক্রয় করতে পারবেন।
- ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবেন।
- TIN রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
- মোবাইল সিম রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
- সরকারি অনুদান ও ভাতা পাওয়ার সুযোগ।
- চাকরির আবেদন করতে NID Card ব্যবহার করতে পারবেন।
এছাড়াও NID কার্ড আরো বহু সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে থাকে।
NID Service ফি
বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবাগুলো ভোগ করার জন্য নাগরিকদেরকে নির্দিষ্ট হারে ফি পরিশোধ করতে হয়। এবিষয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক NID Service Bangladesh -এর ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। নিচে NID BD Service ফি এর নির্ধারিত পিডিএফ ফাইলের ছবিটি দেওয়া হলো:
এছাড়াও আপনি চাইলে NID Card Fee -এই লিংকে ভিজিট করে, বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্রের ফি এর পরিমাণ চেক করতে পারবেন।
NID Server – NID Service Bangladesh পাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত NID Server টি হলো NID wing। মূলত এই এনআইডি উইং সার্ভারের মাধ্যমেই জাতীয় সার্ভিস সমূহ অনলাইনে প্রদান করা হয়। এই NID Server টি থেকে নতুন আইডি কার্ড আবেদন, এনআইডি সংশোধন, এনআইডি কার্ড ডাউনলোড, ভোটার তথ্য যাচাই, আইডি কার্ড রি-ইস্যু ইত্যাদি সেবা সমূহ নাগরিকদের দেওয়া হয়।
২০১৬ সালে এই NID Wing সার্ভার টি তৈরি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রমে আধুনিকায়ন এসেছে।
NID BD | বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র
NID BD বা বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্রের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ২০০৮ সাল থেকে। এর আগে দেশের নাগরিকদের জন্য পরিচয় সংক্রান্ত কার্ডের ব্যবস্থা থাকলেও, তা তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখত না। তাই নাগরিকদের নাগরিকত্বের সনদ ও পরিচয় সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে বায়োমেট্রিক আইডেনটিফিকেশন চালু করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির পরিচয় তথ্যগুলো, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় বায়োমেট্রিক তথ্যভান্ডারের সাথে সংযুক্ত করা হয়। ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ আইডেন্টিটি কার্ড সরবরাহ করা হতো। যেখানে শুধুমাত্র এনআইডি কার্ডধারী ব্যক্তির ব্যক্তির নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, এনআইডি নাম্বার, ছবি ও স্বাক্ষর উল্লেখিত থাকতো।
কিন্তু তারপর থেকে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবং এটি আধুনিকায়ন বা ডিজিটালাইজড করা হয়েছে।
বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র বা NID BD (NID Service Bangladesh) সম্পর্কে এই ছিল বিস্তারিত। আশাকরি সম্পূর্ণ আলোচনাটি বুঝতে পেরেছেন, ধন্যবাদ।
আমি Nidbdris.info ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন প্রফেশনাল কন্টেন্ট রাইটার। বাংলাদেশের নাগরিক সেবা ও ই-সেবা সম্পর্কে দীর্ঘদিনের লেখালেখির অভিজ্ঞতা থেকে, এই ওয়েবসাইটে NID Card, e-Passport, Visa, Birth Certificate সম্পর্কিত টিউটোরিয়াল, দিকনির্দেশনা, ও সরকারি নোটিশ প্রকাশ করে থাকি।
Tgfdg