জন্ম নিবন্ধন দেশের একজন নাগরিকের প্রাথমিক রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্র। গুরুত্বপূর্ণ এই নথিটি সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধি-নিষেধ মানতে হয়। নতুন জন্ম নিবন্ধন করার নির্দেশনা ও কিছু আবশ্যক বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে Bdris.gov.bd থেকে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির তুলনায় একটি শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা তুলনামূলকভাবে সহজ। কারণ শিশুর জন্ম গ্রহণের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করলে, সেক্ষেত্রে কোন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বা আইনি জটিলতা সম্পন্ন বিষয়ের সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু একজন প্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে, অনেকেই ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য একাধিক জন্ম নিবন্ধন করে বা ভুল তথ্য দিয়ে জন্ম সনদ করে। তাই নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদনের পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়গুলো না মানলে আবেদন বাতিল করা হতে পারে।
নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদনের পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় – জন্ম নিবন্ধন করার নির্দেশনা
জন্ম নিবন্ধন আবেদনের ক্ষেত্রে যেসকল বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখতে হয়, সেগুলো হলো:
- নিবন্ধনাধীন ব্যক্তি বা শিশুকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। তবে পিতা-মাতা বাংলাদেশি হলে এবং শিশু বিদেশে জন্মগ্রহণ করলেও তার জন্ম সনদ করা যাবে।
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির পূর্বে কোন জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে রয়েছে কি-না, তা যাচাইপূর্বক নিশ্চিত করতে হবে। অনেকেরই পুরাতন হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন থাকে, যা নিবন্ধন কার্যালয়ের ডাটাবেজে/ অনলাইনে সাবমিট করা হয়েছিল। পূর্বে জন্ম নিবন্ধন থাকলে পুনরায় আবেদন না করে, আগের জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে রিপ্রিন্ট করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার সন্দেহ থাকলে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য কেন্দ্র থেকে পূর্বে নিবন্ধন আছে কি-না, তা যাচাই করে নিন।
- Bdris এর নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এক শব্দের নাম দিয়ে জন্ম নিবন্ধন হবে না। জন্ম সনদ করার জন্য নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির নামে সর্বনিম্ন ২ টি শব্দ দিতে হবে। যেমন: ঝামেলা, মর্জিনা, করিমা, জরিনা ইত্যাদি এক শব্দের নাম দেওয়া যাবে না। রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় থেকে নতুন এই বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ এক শব্দের নাম দিয়ে পাসপোর্ট করা বা ভিসা প্রসেসিং করা যায় না। সেক্ষেত্রে বর্তমানে এক শব্দের নাম দিয়ে পরবর্তীতে একাধিক শব্দ দিলে জাতীয় পরিচয় পত্র গুলোর মধ্যে ভিন্নতা দেখা দেয়।
- আরও পড়তে পারেনঃ জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড – Birth Certificate Download
- অনলাইনে একাধিক জন্ম নিবন্ধন থাকলে এবং পূর্বের জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সঠিক না হলে, তা বাতিল না করে নতুন জন্ম সনদ করা যাবে না। এক্ষেত্রে উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে নিবন্ধক কার্যালয়ে আবেদন করে বাতিল করতে হবে। রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় ছাড়া জন্ম নিবন্ধন বাতিল করা সম্ভব হয় না।
- দ্বৈতভাবে একাধিক জন্ম সনদের আবেদন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। মনে রাখবেন, জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কে জালিয়াতি করলে প্রশাসনিকভাবে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রনয়ণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘জন্ম নিবন্ধন আইন’ -এর বিধান অনুযায়ী, বিধি লংঘনকারী নিবন্ধক বা ব্যক্তি অনধিক ৫০০ টাকা, অথবা অনধিক ২ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
- আবেদনের সময় নিবন্ধনকারী ব্যক্তি, পিতা-মাতা এবং ঠিকানার সকল তথ্য সঠিক হয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত হয়ে সাবমিট করতে হবে।
- আবেদনপত্রটি সাবমিট করার পূর্বে, সকল তথ্য ঠিক আছে কিনা দেখে নিন এবং আবেদনকারীকে দেখান। একবার সাবমিট করা হয়ে গেলে আবেদনপত্রটিতে আর কোনপ্রকার এডিট করার সুযোগ থাকবে না।
- বর্তমানে জন্ম নিবন্ধনের ই পেমেন্ট কার্যক্রম চালু হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর অফিস এবং পৌরসভা কার্যালয়ের নানান দুর্নীতির ঠেকাতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় থেকে। এখন অনলাইনে নির্দিষ্ট পরিমাণ সরকারি ফি দিয়েই আবেদন করা যাবে, আগের মত জনপ্রশাসন কার্যালয়ে বাড়তি টাকা দিতে হবে না।
- নতুন জন্ম সনদের আবেদন এবং ই-পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
উপরোক্ত সকল নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করে নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে পারবেন। উপরোক্ত দিকনির্দেশনা গুলো অনুসরণ না করলে বর্তমানের Bdris এর কঠিন নিয়মনীতি অনুসারে, আপনার আবেদনটি গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। তাই এ সকল বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবেন।
জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত সকল সেবা সমূহ:
আমি Nidbdris.info ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা এবং একজন প্রফেশনাল কন্টেন্ট রাইটার। বাংলাদেশের নাগরিক সেবা ও ই-সেবা সম্পর্কে দীর্ঘদিনের লেখালেখির অভিজ্ঞতা থেকে, এই ওয়েবসাইটে NID Card, e-Passport, Visa, Birth Certificate সম্পর্কিত টিউটোরিয়াল, দিকনির্দেশনা, ও সরকারি নোটিশ প্রকাশ করে থাকি।